রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ || ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত : ১১:৫১, ৯ জুলাই ২০২৪

প্রতিদিন ১ বিলিয়ন মানুষ চকলেট খায়

প্রতিদিন ১ বিলিয়ন মানুষ চকলেট খায়
সংগৃহীত

চকলেট খেতে কে না পছন্দ করেন, কেউ ডার্ক চকলেট কেউবা মিষ্টি চকলেট। একেকজনের পছন্দ একেকরকম। তাই তো একেক চকলেটের দিবসও আলাদা। তেতো মিষ্টি চকলেট দিবস ১০ জানুয়ারি, মিল্ক চকলেট দিবস ২৮ জুলাই, সাদা চকলেট দিবস ২২ সেপ্টেম্বর এবং চকলেট কভারিং দিবস ১৬ ডিসেম্বর।

তবে বিশ্ব স্বীকৃত চকলেট দিবস ৭ জুলাই। ইউরোপে ১৫৫০ সাল থেকে এ দিনে চকলেট দিবস পালিত হয়ে আসছে। মিষ্টি মুখ করতে, কাউকে উপহার কিংবা প্রিয় মানুষটির রাগ ভাঙাতে এক বক্স চকলেট যথেষ্ট। তবে জানেন কি, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মানুষ চকলেট খায়।

তবে চকলেটের জনপ্রিয়তা এই শতাব্দীতে নতুন নয়। ১৬ শতকে মিষ্টি হয়ে ওঠে অনেক পরিবারের জনপ্রিয় খাবার। সে সময় বেকারস চকলেট ছিল আমেরিকার প্রথম চকলেট কোম্পানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কনফেকশনার্স অ্যাসোসিয়াশন চিনিযুক্ত খাবার উদযাপনের জন্য এখটি বিশেষ দিন মনোনীত করে। কিছু সূত্র মনে করেন, ২০০৯ সালে প্রথম বিশ্ব চকোলেট দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দিনটি রয়েছে একাধিক মাহাত্ম্য রয়েছে বিস্তর।

চকলেট কিন্তু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ডার্ক চকলেট অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পূর্ণ। যা রক্ত চাপ কমাতে ও কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তাই শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে খেতে পারেন ডার্ক চকলেট। চকলেট খেলে ভালো থাকবে আপনার হার্ট এবং ব্রেইনও।

মূলত একটি গাছের বীজ থেকে তৈরি হয় এই চকলেট। তবে পদ্ধতি এতটাও সহজ নয়। বেশ লম্বা পদ্ধতিতে তৈরি হয়ে আপনার হাতে আসে একটি চকলেট বার। চকলেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল কোকোর বীজ। এই কোকো গাছটিকে গ্রীক ভাষায় বলা হয় থিওব্রোমা ক্যাকাও। এর অর্থ হলো দেবতাদের জন্য খাদ্য। ৫০০ গ্রাম চকোলেট তৈরিতে ৪০০ পর্যন্ত কোকো বীজ প্রয়োজন হয়।

জানেন কি? চকলেটের এই বিশাল চাহিদা পূরণ করতে বেশিরভাগ কোকো উৎপাদন হয় আইভরি ও ঘানাতে। শুধু ইউরোপ-আমেরিকাতেই বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি কোকোয়া বীজ কেনা-বেচা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ৪০০০ বছর আগেই মেক্সিকোতে প্রথম কাকো গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে অ্যাজটেকরা প্রথম চকলেট পানীয় হিসেবে খাওয়া শুরু করেন ২৫০০ বছর আগে থেকে। সে হিসেবে চকলেটের ইতিহাস আড়াই হাজার বছর পুরোনো। ‘চকলেটের সত্য ইতিহাস’ (থেমস এবং হাডসন, ২০১৩) বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ সোফি এবং মাইকেল কো এর মতে, চকলেট শব্দটি এসেছে অ্যাজটেক শব্দ জোকোয়াটল থেকে।

তখনকার সময় কোকোয়া বীজ থেকে এক ধরণের তেঁতো স্বাদযুক্ত পানীয় তৈরি করতেন। স্পেনীয় বিজয়ীদের মধ্য আমেরিকায় আসার আগ পর্যন্ত এভাবেই চকলেট খাওয়ার প্রচলন ছিল। ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মধ্য আমেরিকায় কোকো গাছ ও এই গাছের বীজ অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়।

সে সময় তারা কোকো গাছের বীজ থেকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘ্রাণ উৎপন্ন করতো। তারপর তা শুকিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোস্টের মতো তৈরি করে তাপ দিয়ে বীজের খোসা ছাড়িয়ে ফেলে দিতো। খোসা ছড়ানোর পর যা অবশিষ্ট থাকতো তাকে বলা হতো নিব। আর এই নিবের সঙ্গেই বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হত চকলেট।

তবে প্রাচীন ওলমেক সভ্যতায় চকলেট পান করা হতো চায়ের মতো। আমেরিকান-ইন্ডিয়ান স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরের সাংস্কৃতিক আর্টস কিউরেটর, হেইস ল্যাভিসের মতে, ১৫০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে গড়ে ওঠা প্রাচীন ওলমেক সভ্যতায় চকলেটকে চায়ের সঙ্গে একটি উত্তেজক যৌগ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ওলমেকসরা একটি আনুষ্ঠানের পানীয় তৈরি করতে কোকো বিন ব্যবহার করতো। যেহেতু তাদের কোনো লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়নি, তাই তারা তাদের তালিকায় কোকো কীভাবে ব্যবহার হতো, বা আদৌ ব্যবহার হতো কি না সে বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়। অনেক ঐতিহাসিক নিশ্চিতভাবে বলেছেন ওলমেকসরা কোকো বিনস ব্যবহার করতো এবং সেখান থেকেই পরবর্তীতে কোকোকে চকলেট হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।

যদি ওলমেকসদের কোকো বিনস ব্যবহারের ইতিহাস সত্যি হয়। তাহলে ধরে নেওয়া যায়, তারা তাদের কোকো সম্পর্কিত জ্ঞান মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল, যার থেকে পরবর্তীতে মায়ানরা তাদের নিজেদের সংস্কৃতিতে কোকো চকলেট হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। মায়ানরা কোকো বিনস শুধু খাবার হিসেবেই ব্যবহার করতো না, তারা এটিকে রীতিমতো শ্রদ্ধা করতো। মায়ানদের লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনে এবং গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন চূড়ান্ত করতে চকলেটকে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতো।

মায়ান সংস্কৃতিতে চকোলেটের এরকম গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও, এটি শুধু মাত্র ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত ছিল না। প্রায় সব ধরনের মানুষের জন্য এটি সহজলভ্য ছিল। মায়ানদের অনেক পরিবারে প্রতিটি খাবারের সঙ্গে চকলেটের ব্যবহার ছিল বাধ্যতামূলক। মায়ানদের ব্যবহৃত চকলেট অনেক ঘন এবং সাদা হতো। এটি তারা মরিচ, মধু বা পানির সঙ্গে মিলিয়ে তারা এটাকে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতো।

অ্যাজটেক সংস্কৃতিতে কোকো বিনস সোনার চেয়ে মূল্যবান বলে মনে করা হত। অ্যাজটেক চকলেট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি উচ্চ-শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের জিনিস ছিল। যদিও নিম্নবিত্তরা মাঝে মধ্যে বিবাহ বা অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোতে এটি উপভোগ করত। অ্যাজটেক শাসক দ্বিতীয় মন্টেজুমা ছিলেন কোকোর অনেক বড় ভক্ত। এটি ছিল তার কাছে অনেকটা মাদকের মতোই। তিনি নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং একটি অ্যাফ্রোডিসিয়াক হিসেবে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে চকলেট পান করতেন। এমনকি তিনি কোকো বিনস তার সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষণও করে রাখতেন।

তবে চকলেট কখন, কীভাবে ইউরোপে পৌঁছেছিল সে সম্পর্কে নানান বিতর্ক আছে। যদিও এটি প্রথমে স্পেনে পৌঁছেছিল বলেই ধারণা করা হয়। একটি প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা ভ্রমণের সময় একটি বাণিজ্য জাহাজকে আটকে দেওয়ার পরে, সেখানে কোকো বিনস আবিষ্কার করেছিলেন এবং তিনি কৌতুহুল বশত, শিমগুলো তার সঙ্গে স্পেনে ফিরিয়ে আনেন ১৫০২ সালে।

এরপর স্পেনে পৌঁছায় কোকো। স্পেনীয়রা প্রথম থেকেই এটি খুবই পছন্দ করা শুরু করে এবং ১৫৮৫ সালে স্পেন চকলেট আমদানি করতে শুরু করে। সেই সময় ইতালি এবং ফ্রান্সের মতো অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ মধ্য আমেরিকার কিছু অংশ দখল করেছিল স্পেন। একচেটিয়া ব্যবসা করেছিল স্পেন। ইউরোপীয় অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে চকলেট।

খুব দ্রুতই চকলেট ম্যানিয়া ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। চকলেটের উচ্চ চাহিদা থাকার ফলে, সেখানে কোকো বাগান তৈরি করা হয় এবং এসব বাগানে হাজার হাজার দাস কাজ করতো। ১৬৪১ সালে একটি স্পেনীয় জাহাজে কোকো বিনস প্রথম ফ্লোরিডায় পৌঁছায়। ধারণা করা হয়, বোস্টনে ১৬৮২ সালে প্রথম আমেরিকান চকলেট হাউজ খোলা হয়েছিল।

১৭৭৩ সালের মধ্যে কোকো শুটি আমেরিকান উপনিবেশের একটি বড় আমদানি পণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং সব শ্রেণির লোকেরা চকলেট উপভোগ করা শুরু করেছিল। আমেরিকান রেভুলশনারি যুদ্ধের সময়, চকলেট সামরিক বাহিনীকে রেশন হিসেবে সরবরাহ করা হত। কখনো কখনো অর্থের পরিবর্তে সৈন্যদের কোকো বিনস প্রদান করা হত।

সূত্র: জাগো নিউজ ২৪

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ