রঙিন মাছ চাষে সফল চাঁদপুরের তারেক
বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন চাঁদপুরের তারেক হোসেন। শখের বশে শুরু করলেও মাত্র তিন বছরেই তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। শুরুতে বাড়ির আঙিনায় ও একটি পরিত্যক্ত জমিতে মাত্র ১ লাখ টাকা খরচ করেন। ছোট্ট পরিসরে প্রজেক্ট শুরু করলেও বর্তমানে তিনটি বড় পুকুর ও বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ৩০টি চৌবাচ্চাসহ প্রায় দেড় একর জমিতে করছেন এ চাষাবাদ। উদ্যোক্তার দাবি, সৌখিন এ মাছ চাষ ব্যাপক লাভজনক।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামের বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেনের ছেলে তারেক হোসেন। পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কাজের ফাঁকে ইউটিউব দেখে রঙিন মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০১৯ সালের শুরুতে ৪টি চৌবাচ্চা দিয়ে রঙিন মাছ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে খামারে গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি, প্লাটিসহ ১১ প্রজাতির মা মাছ আছে। এক লাখ টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় ও একটি পরিত্যক্ত জমিতে ছোট্ট পরিসরে চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে তার খামার আছে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির অ্যাকুরিয়াম পিস।
তরুণ এ উদ্যোক্তা জানান, একটি মাছের রেণু থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার পোনা মাছ উৎপাদন সম্ভব। নিজের খামারে উৎপাদিত এসব পোনা বিক্রি করে তিনি বছরে প্রায় আয় করছেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে সরকারি খাস জমি লিজ পেলে তার খামার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান এ উদ্যোক্তা।
শুরু থেকেই পেয়েছেন পরিবারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা। চাকরির সুবাদে নিজে বাড়ির বাইরে থাকায় বাবা ও ছোট দুই ভাই লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন এসব মাছের। বাইরে অলস সময় না কাটিয়ে নিজেদের প্রজেক্টে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন তারাও। নিজের ছোট্ট ব্যবসা ছেড়ে বাবাও যোগ দিয়েছেন তাদের সহযোগিতায়। নিয়মিত করছেন খামারে দেখাশোনা।
উদ্যোক্তা তারেকের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার ছোটখাটো একটি দোকান ছিল। দোকানের আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা করতাম। ২০১৯ সালে তারেক বিষয়টি জানালে সম্মতি দিই। ছেলে চাকরির পাশাপাশি অন্য কিছু করতে চায়, এতে কোনো আপত্তি করিনি। পরে একসময় দেখলাম, তার উদ্যোগটি লাভজনক। তাই নিজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এখানেই সময় দিতে শুরু করেছি। এখন ছেলে ঢাকায় থাকলেও আমি আর দুই ছেলে নিয়মিত দেখাশোনা করি। এখান থেকে ভালো লাভবান হচ্ছি।’
উদ্যোক্তা তারেক হোসেনের ছোট ভাই মো. হোসেন ও রাকিব হোসেন জানান, ভাই যখন এ প্রজেক্ট চালু করে, প্রথম থেকেই তারা এখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। বাইরে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর চেয়ে এখানে মাছের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটাতেই ভালো লাগে তাদের। অনেক সময় খাওয়া-দাওয়ার কথাও মনে থাকে না। কীভাবে যে মাছের সঙ্গে খেলা করতে করতে সময় কেটে যায়, তারা নিজেরাও জানেন না। তাই ভাইয়ের এমন উদ্যোগে তারা গর্বিত।
স্থানীয় বাসিন্দা জনি ও আব্দুল গনি জানান, রঙিন এসব মাছ দেখতে মাঝে মাঝেই আসেন তারা। আশেপাশের তরুণ যুবক ও মধ্যবয়সীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও আসেন এখানে। তবে শিক্ষার্থী হওয়ায় এখনই চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না জনি। তবে ভবিষ্যতে তার রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা আছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বাসাবাড়িতে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে শৌখিন মানুষ এসব মাছ পালন করেন। এসব মাছের দাম একটু বেশি। তা ছাড়া এ মাছের চাষাবাদে প্রয়োজন নেই অতিরিক্ত সময়ের। নির্ধারিত সময়ে খাবার ও একটু যত্ন নিলেই ব্যাপক লাভবান হতে পারেন উদ্যোক্তারা। তাই রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
দৈনিক গাইবান্ধা