আজকের জন্য না হয় ফিরে যান শৈশবে

শৈশব এমন একটি সময় যখন আমরা কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কাটাই। তখন বুঝতে না পারলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৈশোর-যৌবন-বৃদ্ধ বয়সে তা খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। শৈশব দুরন্তপনার সময়। খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে নানান সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর সময় শৈশব।
শৈশব হলো ভুল করার সময়, যেখানে মানুষ ভুল করেই শেখার জন্য। শৈশব যেন রংধনুর সাত রঙে রাঙানো এক পৃথিবী। যেখানে নেই কোনো ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, ভালো-মন্দের বুঝ, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, আশপাশের মানুষের মন রক্ষা করে চলার মতো কঠিন কাজ। এই সময় কাটে শুধুই দুরন্তপনায়, খেলাধুলা, খাওয়া, ঘুম, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ আর যা ইচ্ছা করার।
তবে একবিংশ শতাব্দীর শিশুদের শৈশব একেবারেই আলাদা। কংক্রিটের চার দেয়ালের মাঝে নানান প্রযুক্তি আর গ্যাজেটে সময় কাটায় তারা। তারা জানে না গ্রামের মাঠে বা বাড়ির উঠোনে গোল্লাছুট, দারিয়াবাধা, কানামাছি, লুকোচুরি, বরফ-পানি খেলার আনন্দ। তারা জানে না পুকুরে সাঁতার কাটার আনন্দ কেমন হয়। দাদাবাড়ি, নানাবাড়িতে মামা-খালা, চাচা-ফুফুদের সঙ্গে সন্ধ্যায় একসঙ্গে মুড়িমাখা খাওয়া আর ভূতের গল্প শুনে গুটিসুটি মেরে বসে থাকার অনুভূতি।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, দাদা-দাদি, নানা-নানির সাহচর্য শিশুদের দীর্ঘজীবী করে। কিন্তু এখনকার বেশিরভাগ শিশুই থাকে ঘরে একা, কিংবা কাজের বুয়াদের কাছে। সারাক্ষণ তারা ডুবে আছে ভিডিও গেম, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে।
তবে আমরা যারা নব্বই দশকে জন্মেছি তারা বোধহয় এদের চেয়ে ভাগ্যবান। আমরা গ্যাজেটের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছি সুন্দর শৈশব কাটিয়ে। বার্ষিক পরীক্ষার ছুটিতে লম্বা সময় কাটিয়েছি গ্রামে। গরমের ছুটিতে কবি জসীম উদ্দীনের কবিতার মতো মামাবাড়িতে সময় কাটাতে পেরেছি। এখনকার শিশুদের সেই সময় নেই। এসব ছুটিতে তারা বাবা-মার সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ করে, কেউবা কোচিংয়ের পড়া শেষ করেই সময় পার করছে।
তবে আজ অফিসের সব কাজের চাপ, বসের ঝাড়ি, কংক্রিটের সব ছেড়ে ফিরে যান শৈশবে। শৈশবের স্মৃতিমন্থন করতে পারেন। আজ ৮ জুলাই দিনটি কিড অ্যাগেইন ডে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়। আমাদের কর্মব্যস্ততার এই জীবনে একটু ফুসরত নেই নিজের জন্য সময় বের করার। একের পর এক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেই হচ্ছে। আজ আমরা কালকে কীভাবে কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছি। অথচ শৈশবে এসব কোনো ভাবনাই ছিল না।
ঠিক তেমনি একটি দিন কাটাতে পারেন। চাইলে শৈশবে কাটানো কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া থেকে বিরতি নিয়ে শিশু হয়ে যান। শিশুদের মতো আনন্দময় একটি দিন কাটান। পছন্দের আইসক্রিম, চিপস খেতে পারেন, প্রিয় কার্টুন সিরিজটি দেখতে পারেন, ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন আজকের দিনে।
২০০৯ সালে মনস্তাত্ত্বিকভাবে তরুণ হওয়া বা শৈশবের স্মৃতিমন্থন করা বা শৈশবের প্রিয় কাজগুলো করা, একজন ব্যক্তির উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং কতটা জীবনযাত্রার মান বাড়াতে পারে, তা বিশ্লেষণ করার জন্য একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। ১ লাখ নারীর উপর এই গবেষণাটি করা হয়। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, এটি নারীদের হতাশা কমাতে এবং হৃদরোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ কমায়।
এই বিষয়টি ২০১৪ সালে আরও অধ্যয়ন করা হয়েছিল এবং আমেরিকান জার্নাল অব লাইফস্টাইল মেডিসিন-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে একটি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা হ্রাস করে।
২০১৬ সালে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বার্ধক্যের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের লোকেরা কম নেতিবাচক আবেগ এবং চাপ অনুভব করে। আমরা বার্ধক্য সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করি তার খুব বাস্তব পরিণতি রয়েছে। অর্থাৎ আমরা যেভাবে বার্ধক্য নিয়ে ভেবেছি এবং যা ঘটছে তার খুব মিল রয়েছে ফলে হতাশা কম কাজ করে। এবং এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি।
সূত্র: জাগো নিউজ ২৪