ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের নাক-কান বন্ধের চিকিৎসা
ঋতু বা মৌসুম পরিবর্তনের পরিক্রমায় শীতকালের দাপট কমে এলেও শিশুদের নাক-কান বন্ধের সমস্যাসহ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বর কমছে না। আক্রান্ত হলে ২-৩ দিন নাক বন্ধ থাকে, নাক দিয়ে পানি ঝরে, গলা ব্যথা ও খুসখুস করে, শুকনা কাশি থাকে। জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশির ভাগ ভাইরাসজনিত রোগ।
ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের নাক-কান বন্ধের চিকিৎসা সম্পর্কে বেসরকারি গণমাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী বিভাগীয় প্রধান, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের নাক-কান বন্ধের সমস্যা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ভাইরাসজনিত ঠান্ডা-কাশিতে ওষুধ লাগে না। তবে শুকনা কাশি শিশুদের কিছুদিন বেশি ভোগাতে পারে।
শীতকালীন ঠান্ডা-কাশি খুব ছোঁয়াচে, দ্রুত ছড়ায়। তাই যার হয়েছে, তাকে অন্যদের সামনে হাঁচি-কাশি দেওয়া থেকে বিরত রাখুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন বা করতে বলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ধুলাবালি, ঠান্ডা থেকে দূরে রাখুন। শীতে নিয়মিত গোসল করান। শিশুদের আরামদায়ক টুপি ও মোজা পরাবেন। জুতা পরিয়ে রাখুন। খালি পায়ে ফ্লোর বা মাটিতে হাঁটলে ঠান্ডা লাগতে পারে।
শিশুদের ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার ও আইসক্রিম খাওয়াবেন না। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে দিন। ভিটামিন সি–যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি খওয়ান। কলা নন-অ্যাসিডিক, লো গ্লাইসেমিক খাবার, যা গলা খুসখুস ও ঠান্ডা-সর্দির ভাব কমায়। সাধারণ ঠান্ডা-সর্দি-কাশিতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে শিশুকে বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়ান। মধু, তুলসী পাতার রস, আদা–চা, লেবুর শরবত বা চা, হালকা গরম পানি অল্প অল্প করে পান করান। হাতে-পায়ে শর্ষের তেল আর রসুন মালিশ করলে আরাম পেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ, গাজর, চিকেন স্যুপ ঠান্ডায় ভালো কাজ করে।
শিশুর নাক বন্ধ হলে নাকে শর্ষের তেল দেবেন না। নাক পরিষ্কার রাখুন। নাক পরিষ্কারের জন্য নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করুন। একটু বড় শিশুরা সর্দি, গলা ব্যথা বা শুকনো কাশি হলে লবণজলে গড়গড়া করতে পারে। গরম পানিতে মেনথল মিশিয়ে নাক-মুখ দিয়ে সেই ভাপ টানলে বন্ধ নাক দ্রুত খুলে যায়। অক্সিমেটাজোলিন বা জাইলোমেটাজলিন নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারবে। তবে সাধারণ ঠান্ডা-সর্দি-কাশিতে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ ভুলেও খাওয়াবেন না।
কাশি হলেই ওষুধ খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, রোগ সাধারণ হোক বা মারাত্মক, যেকোনো স্বাস্থ্যসমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে; নিজের ইচ্ছামতো বা অন্য কারও পরামর্শে নয়। খেয়াল রাখুন, শিশু বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে কিনা। নেতিয়ে পড়ছে, হাসছে না, খেলছে না, তাকাচ্ছে না—এমন হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
জ্বর এলে, খেতে না পারলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে অথবা বেশি ঘনঘন শ্বাস নিলে, শ্বাস নিতে বুকের নিচের দিকটা দেবে গেলে, বুকে শাঁ-শাঁ বা চিঁ-চিঁ শব্দ, কাশি দীর্ঘস্থায়ী (২ সপ্তাহ বা তার বেশি) হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ, এগুলো বিপদচিহ্ন।
সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ