ক্ষুধা বৃদ্ধি করে বিলাতি ধনিয়া, কমায় চুলকানি
বিলাতি ধনিয়া মূলত একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি ক্ষুদ্রাকার দীর্ঘজীবী বীরুৎ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Eryngium foetidium L। এটি Umbeliferae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর কাণ্ড অস্পষ্ট ও ভূসংলগ্ন৷ কিন্তু ফুল আসার সময় উপরদিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং কাণ্ড ফাঁপা হয়ে শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়৷ এই গাছের পাতার দৈর্ঘ্য ১৫-২০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ২-৩ সেন্টিমিটার এবং পত্রফলকের কিনারা সামান্য খাঁজযুক্ত ও অগ্রভাগ ছোট ছোট সূক্ষ্ম কাঁটাযুক্ত হয়৷
বিলাতি ধনিয়া একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফসল। নাতিশীতোষ্ণ থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিলাতি ধনিয়া চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে এটি খরিফ মৌসুমের ফসল হলেও সারা বছরই চাষ করা যায়। প্রখর সূর্যালোকের চেয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে দ্বিগুণ উৎপাদন পাওয়া যায়।
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বিলাতি ধনিয়া জন্মে। তবে প্রচুর জৈব পদার্থসমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দোআঁশ থেকে পলি-দোআঁশ মাটি অধিক উপযোগী। এটি একটি ছায়াপ্রিয় উদ্ভিদ৷ ফুল ক্ষুদ্রাকৃতির, বৃন্তবিহীন এবং মঞ্জুরীদণ্ডে ঘন সন্নিবেশিত থাকে৷ বীজ দ্বিবীজপত্রী, অমসৃণ, ক্ষুদ্রাকৃতির, বৃন্তবিহীন এবং মঞ্জুরীদণ্ডে ঘন সন্নিবেশিত থাকে৷ সাধারণত বীজ এবং পার্শ্ব শাখা থেকে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল যেমন রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। এই ফসলটি বাণিজ্যিকভাবে অনেক লাভজনক একটি ফসল। বিলাতি ধনিয়ার পাতা ও কচি পুষ্পদণ্ড একাধারে সবজি, সালাদ এবং মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়৷ রান্নার কাজে তরকারিতে, ডাল, ভাজি ও নিরামিষে ইহা সুগন্ধি বৃদ্ধি করে। সালাদ হিসাবে, অন্যান্য সালাদের সাথে মিশ্রণে, সবজি হিসেবে এবং ভর্তা করেও খাওয়া যায়। এছাড়াও বেসন দিয়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার বড়া তৈরিতে, পিয়াজুতে, সিঙ্গারায় এবং ভেজিটেবলে রোলে সুগন্ধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বিলাতি ধনিয়ার গাছে ফুল ফোটার ৪০ দিনের মধ্যে বীজ পেকে যায়। বেশি পাকতে দিলে বীজ ঝরে যায়। চারা একটু বড় হলে সরাসরি জমিতে সারিতে ১০-১৫ সে.মি. দূরত্বে লাগাতে হয়। বর্তমানে বিলাতি ধনিয়া বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশে চাষ হচ্ছে।
বিলাতি ধনিয়ার ঔষধিগুণ:
১. ধনিয়াপাতা শরীর ঠান্ডা রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করেও থাকে এবং বায়ুনাশক।
২. ধনিয়াপাতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. দেহের চুলকানি-পাঁচড়ায় এই পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
৪. ধনিয়াপাতা চিবিয়ে রস বের করে তা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয় খুব দ্রুত। এছাড়া মাড়িও শক্ত করতে সাহায্য করে এই ধনেপাতা।
৫. ধনিয়াপাতা বেটে সেই রস খেলে অর্শ রোগীর রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ