পারফিউম ব্যবহারে কী কী সমস্যা হতে পারে?
অফিস, অনুষ্ঠান বা বাড়িতে পারফিউম বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন প্রায় অনেকেই। এই সুগন্ধি আমাদের ব্যক্তিত্বে যেমন বিশেষ প্রভাব রাখে। তেমনি বজায় রাখে আত্মবিশ্বাসও। তবে এই সুগন্ধি লাগানোর অভ্যাস আপনার জীবনে মারাত্মক কুপ্রভাবও ফেলতে পারে। ডেকে আনতে পারে নানা রোগের ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ পারফিউমের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ। আর এই রাসায়নিকগুলো শরীরে প্রবেশ করে অ্যালার্জির মতো সমস্যা তৈরি করে। বেশিরভাগ পারফিউম বিষাক্ত ইথানল ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল থেকে তৈরি হয়। কখনো কখনো এটির ব্যবহারে ডার্মাটাইটিস সৃষ্টি হয়। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, লাল ফুসকুড়ি, ফুসকুড়ি বা চুলকানি হয়।
কারো কারো পারফিউম লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর চুলকানি শুরু হয়। একে চিকিৎসকদের ভাষায় ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস বলে। অনেকের এই ধরনের অ্যালার্জি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেখা যায়। একে বলা হয় অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস।
এবার চলুন দেখে নিই পারফিউম ব্যবহারে কী কী সমস্যা হতে পারে-
খেয়াল করে দেখবেন যে, আমরা যখন ধাতব ঘড়ি কিনতে যাই দোকানদাররা আগে থেকেই সাবধান করে দেয়। জানায়, ঘড়ি পরার সময় সুগন্ধি না লাগাতে। এতে ঘড়ির রং বিবর্ণ হবে। চিন্তা করুন, সুগন্ধি যদি একটি ঘড়িকে বিবর্ণ করতে পারে তাহলে আপনার ত্বকের কতটা ক্ষতি করবে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা প্রায়শই ঘড়ি বা গয়না পরে পারফিউম লাগানোর ভুল করি। যদি এমন করি তবে এটি একটি ধাতব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যক্তিটি যোগাযোগের ডার্মাটাইটিসের শিকার হতে পারে। কখনো কখনো এটি ফোসকা ও ফোলা সৃষ্টি করে।
পারফিউমের গন্ধ পেলেই কারো কারো মাথাব্যথা শুরু হয়। কেউ কেউ আবার বমিও শুরু করেন। অনেক সময় পারফিউম লাগানোর সময় এর ফোঁটা মুখেও প্রবেশ করে। এতে আবার অনেকের পেট খারাপও হয়। ফলে বমি ও ডায়রিয়ার পাশাপাশি অজ্ঞান বোধ করতে শুরু করেন। শিশুরা ভুল করে এটি পান করলে তাদের রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যায়। একে পারফিউম পয়জনিং বলে। যত তাড়াতাড়ি এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেবে তত তাড়াতাড়ি একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
গ্রীষ্মে ঘামের কারণে প্রায়ই মানুষের দাদের শিকার হন। যদিও একজিমা ও সিরোসিস অটোইমিউন রোগ হয় শুষ্ক ত্বকের কারণে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সমস্যা থাকলে ভুলেও পারফিউম ব্যবহার করা উচিৎ না।
পারফিউমে আগ্নেয়গিরির জৈব যৌগ থাকে। এই রাসায়নিক কণা পেইন্টেও পাওয়া যায়। এই কণাগুলো যাদের ফুসফুস দুর্বল তাদের ক্ষতি করে। একই সঙ্গে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের পারফিউম লাগানো নিষেধ।
বিশ্বের অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সুগন্ধি জিনিস হরমোন প্রভাবিত করতে সক্ষম। যখন পারফিউমের সুগন্ধ শ্বাসের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কে উপস্থিত হয় তখন নিউরনগুলো এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে সংকেত পাঠায়। যার ফলে হরমোনগুলো দ্রুত নিঃসৃত হতে শুরু করে। যখন শরীরে হরমোন অত্যধিক ওঠানামা করে, তখন তারা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্লান্তি, থাইরয়েড, পিসিওএস, অনিয়মিত পিরিয়ড ও লিবিডোর অভাবের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও পারফিউমকে রাসায়নিকের ককটেল বলা চলে। পারফিউমে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের উর্বরতাকে প্রভাবিত করে। এক গবেষণা অনুসারে, এটি পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারীরা গর্ভাবস্থায় ক্রমাগত সুগন্ধি ব্যবহার করলে তা সরাসরি সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। যদি শিশুটি ছেলে হয়, তাহলে গর্ভাবস্থার ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রজনন ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে শুরু করে, যা তাকে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের দিকে ঠেলে দেয়। আসলে পারফিউম শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। তাই এসব সুগন্ধি ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ