গাইবান্ধায় চরাঞ্চলে ২০০ কোটি টাকার মরিচ বিক্রির সম্ভাবনা
নদীবিধৌত গাইবান্ধা জেলায় রয়েছে শতাধিক বালুচর। এসব চরে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে মরিচ যেন কৃষকের প্রাণ। চলতি মৌসুমে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকার শুকনো মরিচ বিক্রির আশা করছেন এখানকার কৃষক।
সম্প্রতি ফুলছড়ির যমুনা নদী সংলগ্ন পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠস্থ হাটে দেখা গেছে- শুকনো মরিচ বেচা-কেনার চিত্র। এরই মধ্যে জমে ওঠা এই হাট থেকে এসিআই, প্রাণ কোম্পানিসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে লাল মরিচ। এখানে প্রতিমণ শুকনো মরিচ ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার ৭টি উপজেলার মধ্যে মরিচ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর মরিচ আবাদ হয়েছে। এছাড়া সাঘাটায় ৪০১, সাদুল্লাপুরে ১৮৫, সুন্দরগঞ্জে ১৫৪, গোবিন্দগঞ্জে ১২৪, পলাশবাড়ীতে ৫১ ও সদর উপজেলায় ৪৭ হেক্টর মরিচ আবাদ হয়। এসবের মধ্যে অধিকাংশ আবাদ রয়েছে চরাঞ্চলে। এ থেকে ৫ হাজার ২৭৮ মেট্রিকটন শুকনো মরিচ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, চরাঞ্চলের বেলে মাটিতে ভুট্রা, মরিচ, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে মরিচ হচ্ছে কৃষকদের স্বপ্নের ফসল। যা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হয়। যার কারণে কয়েক বছর ধরে মরিচ উৎপাদনে ঝুঁকছে এখানকার কৃষক। এবারও তা ব্যর্তয় ঘটেনি। গত বছরের তুলনা এবার বেশি জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাছ থেকে পাকা মরিচ সংগ্রহ করে শুকানোসহ তা হাটে বিক্রি শুরু করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা চরাঞ্চলের উৎপাদিত মরিচ কেনা-বেচার একমাত্র হাট হচ্ছে ফুলছড়ির যমুনা নদী সংলগ্ন মরিচের হাট। প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এই হাটে মরিচ বেচাকেনা চলে। চরাঞ্চল থেকে কৃষকরা নৌকা ভর্তি মরিচ নিয়ে এসে এখানেই বেচাকেনা করে থাকেন। এ হাটে সূর্য ওঠার পর থেকেই আসতে শুরু করে শুকনো লাল মরিচ। কেউ কেউ নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রি করতে আসেন। লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো বস্তায় কাণায় কাণায় ভরে ওঠে হাট।
মোল্লারচরের কৃষক আজমত আলী জানান, এ বছর এক একর বেলে মাটিতে উন্নত জাতের মরিচ আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। এ থেকে প্রায় ৫০ মণ মরিচ উৎপান হবে। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতিমণ শুকনো মরিচ ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন। যা বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হবেন বলেও জানিয়েছেন এই কৃষক।
মরিচের হাটে আসা কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর মরিচের চাহিদা অনেক বেশি। এই হাটে মরিচের মান ভালো হওয়া একটু দামও বেশি রয়েছে। ফুলছড়ির হাট ইজারাদার নুরুল আমিন জানান, জেলার বিখ্যাত হাট এটি। ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়ে নিরাপদে হাট করেন। আর এখান থেকে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজাস্ব আয় করে থাকেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, জেলার সমতল ভূমিসহ চরাঞ্চলে মরিচ চাষাবাদ অত্যান্ত উপযোগি। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত মরিচ বাজারে অনেক চাহিদা আছে। তাদের লাভবান করতে প্রণোদনা দেওয়াসহ সর্বাত্নকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।