রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ || ৭ পৌষ ১৪৩১

প্রকাশিত : ১৮:১১, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

রাজার স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে রহস্যময় দীঘিতে তলিয়ে গেলেন রানি

রাজার স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে রহস্যময় দীঘিতে তলিয়ে গেলেন রানি
সংগৃহীত

ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায়ের এক মহাকীর্তি ও ঐতিহাসিক ট্রাজেডির নাম ‘ঢোল সমুদ্র দীঘি’। শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও শতাব্দী পুরাতন দীঘিটি ৫২ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। দীঘির পাড়ে সারি সারি গাছ সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পহেলা বৈশাখ, বসন্ত, ঈদ,পূজাসহ নানা উৎসবে মানুষ ছুটে আসে রহস্যে ঘেরা এই শান্ত-শীতল দীঘির পাড়ে। দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান।

ঝিনাইদহ জেলার তথ্য বাতায়নের ইতিহাস-ঐতিহ্যের তথ্যমতে জনশ্রুতি আছে, ঝিনাইদহে প্রতাপশালী রাজা মুকুট রায়ের রাজত্ব কালে প্রজাদের মধ্যে ভীষণ পানিকষ্ট দেখা যায়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি-কোথাও পানি ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিন্তু পুকুরে পানি উঠল না। হতাশ রাজা একদিন রাতে স্বপ্নে দেখলেন, যদি রানী পুকুরে নেমে পূজা দেন তাহলে পুকুরে পানি ভরে উঠবে। রাজার স্বপ্নের কথা শুনে প্রজাহিতৈষী রাণী প্রজাদের স্বার্থে স্বাচ্ছন্দ্যে রাজি হলেন।

ধুমধাম করে দিন ক্ষণ ঠিক করে ঢোল, সানাই, বাঁশি বাজিয়ে পুকুরের পাড়ে প্রজারা সমবেত হল। রানী পুকুরের তলদেশে গিয়ে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। প্রার্থনা মঞ্জুর হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের তলা থেকে প্রবল বেগে পানি উপরে উঠা শুরু করলো। কিন্তু রানী যখন পুকুরের তলদেশ থেকে উপরে উঠে আসতে চাইলেন তখন পানির বেগ আরো বেড়ে গেল। এদিকে পানি উঠার আনন্দে ও প্রজাদের ঢোল, বাঁশি ও সানাইয়ের শব্দে পুকুরের দিকে কারো খেয়াল ছিল না। অলক্ষ্যে রানী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। রানীর সেই স্মৃতি স্মরণে আজো লোকজন এ দীঘিকে ‘ঢোল সমুদ্র দীঘি’ বলে জানে।

কথিত রয়েছে, রাজা মুকুট রায় যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাকে মুক্তি দেন। কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যরা রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন। তার কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহ বিল, দু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের বিল, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহনামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও ঝিনাইদহে এ নামেই পরিচিত। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করতেন সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনো বর্তমান।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ