ফাতিমা রা.-এর বিয়ে হয়েছিল যেভাবে
মুসলিম নারীদের সর্দার হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহা। নবুয়তের পাঁচ বছর আগে তিনি খাদিজা রা.-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাসূল সা.-এর সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে আদরের ছিলেন।
হজরত আলী রা.-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয় দ্বিতীয় হিজরিতে বদর যুদ্ধের পর।
প্রথমে হজরত আবু বকর ও ওমর রা. তাকে বিয়ের জন্য রাসূল সা. এর কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে কোনো সাড়া না দিয়ে চুপ থাকেন তিনি। রাসূল সা.-এর চুপ থাকার কারণ হিসেবে এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর আদেশের অপেক্ষা করছিলাম।
বিয়ের প্রস্তাব
এরপর আবু বকর ও ওমর রা. আলী রা.-কে পরামর্শ দিলেন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। হজরত আলী তাদের পরামর্শে আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে নিজেই নিজের বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।
তিনি বলেন, আমি যখন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখণ মনে মনে ভাবলাম, আমার কাছে তো কিছুই নেই, অথচ বিয়েতে কিছু না কিছুর প্রয়োজন তো হয়ই। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের অনুগ্রহ, বিবেচনা, আমার প্রতি তার সদয় দৃষ্টি ও দয়ার ফলে সাহস সঞ্চার করে তার কাছে বিয়ে আবেদন করলাম।
রাসূল সা.-এর জবাব
বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর রাসূলুল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কাছে মোহর দেওয়ার মতো কিছু আছে? তিনি না উত্তর দিলে মহানবী সা. আলী রা.-কে বললেন, বদর যুদ্ধে তুমি যে লৌহবর্মটি পেয়েছো তা বিক্রি করে ফাতিমাকে মোহর আদায় করে দাও।
হজরত আলী রা. তার বর্মটি হজরত উসমান রা.-এর কাছে বিক্রি করে দেন। যার মূল্য ছিল চার শ দিরহাম।
বিয়ে হলো যেভাবে
বিয়ের দিন সকালে মহানবী সা. উম্মে আইমান রা.-এর মাধ্যমে প্রথমে আলী রা.-কে ডেকে পাঠান এবং তার গায়ে পানি ছিটিয়ে দোয়া করেন। এরপর ফাতিমা রা.-কে ডেকে পাঠান। তিনি লজ্জা-সংকোচ নিয়ে উপস্থিত হলে নবীজি সা. তাকে বলেন, আমি আমার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় পাত্রের সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি। এরপর তার গায়েও পানি ছিটিয়ে দেন এবং দোয়া করেন।
মসজিদে নববীতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং উপস্থিত লোকদের খেজুর দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। মহানবী সা. নিজেই বিয়ের খুতবা পাঠ করেন এবং আকদ সম্পন্ন করেন।
নব দম্পতিকে নবীজির উপহার
নবীজি সা. নব দম্পতিকে একটি খাঁট, দুটি তোশক, একটি কম্বল, ইয়েমেনি চাদর, একটি বালিশ, পানির মশক, একটি কলস, একটি জাঁতা উপহার হিসেবে দেন।
ওলিমা
ফাতিমা রা.-এর বাগদান সম্পন্ন হলে রাসূলুল্লাহ সা. আলী রা.-কে বললেন, বরের জন্য ওলিমা করা আবশ্যক।
তখন সাদ ইবনে মুয়াজ রা.) বলেন, আমি একটি মেষ দেব এবং আনসার সাহাবিরা এক বস্তা ভুট্টা একত্র করেন। এটা দিয়েই তাদের বিয়ের ওলিমা হয়।
আল্লাহ তায়ালা ফাতিমা ও আলী রা.-কে পাঁচটি সন্তান দান করেন। হাসান, হুসাইন, মুহসিন, উম্মে কুলসুম ও জয়নব রা.।
তাদের মধ্যে মুহসিন খুব অল্প বয়সে মারা যান। হাসান ও হুসাইন রা.-এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সা.-এর বংশধারার বিস্তার ঘটে। মহানবী সা.-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর ফাতিমা রা.-এর ইন্তেকাল হয়।
সূত্র: Dhaka post